ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে যে ৩টি খাবার

আমাদের ধারণা বেশি খাবার খেলে ওজন বাড়ে। কিন্তু ওজন কমানোর খাবার যে প্রচুর রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। তেমনই একজন মানুষ হচ্ছে রশীদ সাহেব। একদিন  তিনি জানতে পারলেন যে অনেক খাবার আছে যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। চলুন তার সাথে সাথে আমরাও জেনে নেই…

অফিসে বিভিন্ন কাজের চাপে দিনের মধ্যে বলতে গেলে প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই ব্যস্ত থাকতে হয় রশীদ সাহেবকে। এদিকে ভোজনরসিক হবার ফলে প্রতিদিন কোন না কোন ভারী খাবার খাওয়া হয়েই যায়। আজকে কাচ্চি বিরিয়ানি তো কালকে মুরগ মুসল্লম। কালকে ভুনা খিচুড়ি তো পরশু কালাভুনা। ভালোমন্দ খেতে খেতে এদিকে তার শরীর বেড়েই চলেছে। কাজের চাপের জন্য খানিক ফ্রি সময় বের করে যে একটু জিমে গিয়ে দৌড়ে আসবেন, সেটাও পারছেন না। ফলে, ভুড়ি বাড়ছে তো বাড়ছেই! বিষয়টা নজর এড়ালোনা সহকর্মী মনির সাহেবের!

– কি ব্যাপার রশীদ সাহেব, দিন দিন আরও বেশী সুখী মানুষ হয়ে যাচ্ছেন মনে হচ্ছে!
– কেন মনির সাহেব?
– এই যে দিন দিন ভুড়ি বের হচ্ছে, দেখতে পাচ্ছি যে! লোকে বলে, ভুড়ি হচ্ছে সুখী মানুষের লক্ষণ, তাই বললাম আরকি! হা হা হা হা
– আর বলবেন না মনির সাহেব এ এক জ্বালা! ভালোমন্দ খাওয়া ছাড়তেও পারিনা, এদিকে কাজের চাপে একটু যে জিমে যাব, সেটাও পারিনা! ভাবছি ভাত খাওয়া ছেড়ে দিন, খাওয়া কমিয়ে দিব!
– হা হা! এ কথা বলে লাভ নেই রশীদ সাহেব। খাওয়া কমিয়ে দিলে বিশেষ কোন লাভও হয়না যেরকম ভাবছেন! তার থেকে বরং চিন্তা করুন, এমন কোন খাবার যদি পান, যা খেলে উলটো ওজন কমবে, তাহলে কিরকম হয়?
– এ কি বলছেন ভাই! এও কি সম্ভব! উলটো আমি তো একটু খেলেও আমার শরীরে লেগে যায় ওটা!
– আছে ভাই আছে। ওজন কমানোর খাবার অনেক আছে। অ্যাপল সিডার ভিনেগার, রেমেডি জ্যুস, গ্রিন টি, সয়াভিটা – আরও কত কি!
– তাই নাকি ভাই? কিভাবে?
– তাহলে ভাই শুনুন এগুলোর উপকারিতা কি কি আর কিভাবে এগুলো খেয়ে ওজন কমাবেন!

ওজন কমানোর খাবার

::::: অ্যাপল সিডার ভিনেগার :::::

আপেল সিডার কোলেস্টেরল কমায়। ২০০৬ সালে জাপানের এক গবেষণাতে দেখা যায়, ভিনেগার এর অ্যাসিটিক অ্যাসিড রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করতে সাহায্য করে। গবেষণায় আরো দেখা যায় যে, আধা আউন্স আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত সেবন কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আপেল সিডার ভিনেগার আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর অ্যাসিটিক অ্যাসিড খাওয়ার ইচ্ছাকে দমন করে, মেটাবলিজম বাড়ায়। এক টেবিল চামচ পরিমাণ অ্যাপেল চিডার ভিনেগারে ১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১.২ মিলিগ্রাম ফসফরাস এবং ১০.৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম আছে, কোনো প্রকার চর্বি ও আমিষ নেই। বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্ব প্রদান করেন যে, এটি স্টার্চকে পরিপাকে সাহায্য করে, ফলে রক্তপ্রবাহে ক্যালরির পরিমান কম হয়। যখনি কোন ব্যায়াম বা জিম করার পর পেশিগুলোতে শক্তির প্রয়োজন পরে বা অতিরিক্ত পরিশ্রম এর পর যখন শক্তি চাহিদা বেড়ে যায় তখন অ্যাপেল সিডার ভিনেগার শক্তির সঞ্চয় করে, এতে রয়েছে পটাসিয়াম ও বিভিন্ন রকম এনজাইম যা দুর্বলতা থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিদিন তাই পরিমিত পরিমাণে অ্যাপল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করলে দেহের ওজম কমে, চর্বি কাটে।

– মনির ভাই, এই অ্যাপল সিডার ভিনেগার কি সব বয়সের সব মানুষই খেতে পারবে?
– অবশ্যই। এই জিনিস পরিমিত পরিমাণে যে কেউই গ্রহণ করতে পারবে। কোন সমস্যা নেই। এর ফলে ওজন কমানোর খাবার না খেয়ে থাকার মতো বা জিম করার মত কষ্টকর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েও যাওয়া লাগবেনা আপনার!
– আচ্ছা! এরকম আর কি খাবার আছে ভাই যা খেলে ওজন কমে?
– আছে ভাই। দ্বিতীয় যে খাবারটির নাম বলব যা খেলে ওজন কমে, তা হল গ্রিন টি!
– গ্রিন টি, হুম্ম। নাম শুনেছি।
– তাহলে শুনে নিন গ্রিন টি খেলে ওজন কিভাবে কমাবেন!

::::: গ্রিন টি :::::

আমরা প্রতিদিন যে চা পান করি, সেটা ব্ল্যাক টি। কখনো দুধ-চিনি মিশিয়ে, কখনো বা চিনি ছাড়া এই চা পান করার প্রচলন রয়েছে। তবে আমাদের দেশে গ্রিন টি বা সবুজ চা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চা-গাছের সতেজ সবুজ পাতা রোদে শুকিয়ে তাওয়ায় সেঁকে গ্রিন টি প্রস্তুত করা হয়। এর রং হালকা হলদে সবুজ। এই চায়ে পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড নামের দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা চা তৈরির পরও অক্ষুণ্ন থাকে।

গ্রিন টি আমাদের শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। এটি হৃদ্‌রোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে শরীরের মেদ কোষে বেশি শর্করা ঢুকতে পারে না। ফলে এই চা আমাদের শরীরের ওজন ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। চীনের একদল গবেষক দেখিয়েছেন যে সবুজ চায়ে বিদ্যমান রাসায়নিক পদার্থ মানুষের স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায় এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়ের স্মৃতি ও তথ্য সংরক্ষণে মস্তিষ্ককে সাহায্য করে। বিভিন্ন স্টাডি থেকে দেখা গেছে যে যাঁরা প্রতিদিন ১ কাপ গ্রীন টি খান তদের তুলনায় যাঁরা প্রতিদিন ৫ কাপ গ্রীন টি খান তদের হার্ট অনেক বেশি সুস্থ।তদের কার্ডিওভাসকুলার রোগ হবার সম্ভাবনা খুবই কম।এছাড়াও শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখতে ও হার্টকে স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচাতে ভীষণভাবে সাহায্য করে।তাই হার্টকে বাঁচাতে চাইলে ও ওজন কমাতে চাইলে গ্রিন টি খাওয়া বাধ্যতামূলক একরকম!

– এতকিছু তো জানতাম না ভাই! বাহ! তা এই গ্রিন টি কোথায় পাব বলুন তো!
– বিভিন্ন সুপারশপ বা অনলাইন শপে পাবেন। তবে ভালো মানের গ্রিন টি বেছে নেওয়াটা জরুরী।
– আচ্ছা, মাথায় থাকলো। আর অন্য কোন ওজন কমানোর খাবার আছে?
– আছে বৈকি! এখন আপনাকে বলব রেমেডি জুস খেলে কিভাবে ওজন কমাতে পারবেন তাঁর কথা!

::::: রেমেডি জুস :::::

রেমেডি জুস এমন এক ধরণের জুস যা নিয়মিত সেবনের মাধ্যমে অনায়াসে ওজন কমাতে পারবেন। ওজন হ্রাস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল জনিত রোগের ভেষজ সমাধান হিসাবে পৃথিবীজুড়ে খ্যাতি অর্জনকারী ভেষজ জুস (রসুন, আদা, লেবু, আপেল সাইডার ভিনেগার এবং মধু) হল এই রেমিডি জুস। যেকোন ধরনের কৃত্রিম রং বা প্রিজার্ভেটিভ মুক্ত ভেষজ জুস হল এটি যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল জনিত রোগের জন্য একটি কার্যকর প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে কাজ করছে।

– বাহ! এটাও তো তারমানে অনেক ভালো একটা ড্রিঙ্ক! খাওয়া কমানো বাদ দিয়ে এটা খেলেও তো ওজন কমবে আমার! কি বলেন মনির ভাই?
– একদম ঠিক বলেছেন!
– বেশ বেশ!

(সুপ্রিয় পাঠক, আপনারাও যদি ওজন কমানোর জন্য রেমেডি জুস, গ্রিন টি আর অ্যাপল সিডার ভিনেগার কিনতে চান, তাহলে অর্ডার করতে পারেনঃ Alamin Organic Food অনলাইন শপ থেকে। )

উল্লিখিত খাবারগুলো ছাড়াও ওজন কমানোর খাবার আরও অনেক রয়েছে। আগামীতে আবারো ওজন কমানোর খাবার  এর উপর প্রতিবেদন নিয়ে হাজির হব। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন সবাই, এই প্রত্যাশা করি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Home
Shop
Cart
Search