ভেষজ গুন সমৃদ্ধ উদ্ভিদ

আমাদের চারপাশে নানা রকমের উদ্ভিদ রয়েছে। এর প্রায় সকলই মানুষের কল্যানে আল্লাহর সৃষ্টি। এসব উদ্ভিদের রয়েছে নানা রকম ভেষজ গুন। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো খাঁটি মধু, অশ্বগন্ধার গুড়া, যষ্টিমধু, কালোজিরা ও তালমিছরি। প্রতিটি পণ্যেরই রয়েছে আলাদা আলাদা অবাক ভেষজ গুন। উপরোল্লিখিত প্রতিটি পণ্যই আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য দারুণভাবে দরকারী। এমনকি এদের প্রত্যেকটির অনেক মরণব্যাধি নিরাময়ের ক্ষমতাও রয়েছে। উদাহরণস্বরুপ কালোজিরার কথা বলা এটিকে মহৌষধ হিসেবে অভিহিত করা হয়। কারন এটি অনেক ধরনের জটিল রোগ নিরাময় করতে পারে। এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক এদের প্রত্যেকটি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে।

অশ্বগন্ধা

ভেষজ গুন সমৃদ্ধ উদ্ভিদ অন্যতম একটি উপাদান হলো অশ্বগন্ধা।গবেষণায় দেখা গেছে অশ্বগন্ধা রক্তে সুগার কমাতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা ইনসুলিন লেভেল এবং পেশীর কোষে ইনসুলিন এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ফলে এটি সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা পালন করে। গবেষণাতে দেখা গেছে অশ্বগন্ধা টিউমার সেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে, যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের প্রতিরোধে কার্যকরী।

  • কর্টিসোল হরমোন স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত। যখন আমাদের শরীর কোন মানসিক চাপে থাকে বা রক্তে সুগারের লেভেল কমে যায় তখন এড্রেনাল গ্ল্যান্ড কর্টিসোল রিলিজ করে।
  • অশ্বগন্ধা এই হরমোনের লেভেল কমিয়ে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • অশ্বগন্ধা কোলেস্টেরল আর ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। অশ্বগন্ধা টেস্টোস্টেরন বাড়াতে এবং ছেলেদের ফার্টিলিটি বাড়াতে সাহায্য করে।

যষ্টিমধু

ভেষজ গুন সমৃদ্ধ উদ্ভিদ অন্যতম একটি উপাদান হলো যষ্ঠিমধু। মধু কন্ঠনালীতে অতিরিক্ত ধুলাবালী জমার কারনে যে খুশখুশি কাশি হয় তা নিবারণ করতে সাহায্য করে এই যষ্টিমধু। যষ্টিমধু খেলে আপনার কন্ঠনালিটাকে পরিস্কার ও সুন্দররাখে। ব্রষ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে দুর্বলতা, প্রভৃতি রোগ নিরসনে যষ্টি মধু কার্য্কর ভূমিকা রাখে।ভিতর জমে থাকা পুরোনো সর্দি,কফ,কাশ পরিস্কার করে থাকে। এছাড়াও কণ্ঠকে শ্রুতি মধুর করে। যষ্টি মধু মুখের দুর্গন্ধ, রুচি বৃদ্ধি কারক, হিসাবে কাজ করে থাকে।

  • ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে যষ্টিমধু ও ঘি একত্রে মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
  • এছাড়া ত্বকের বলিরেখা, ব্রণ ও দাগ দূর করে। যষ্টিমধুর গ্লাইসিরাইজিক অ্যাসিড মাস্টকোষ হতে হিস্টামিন নিঃসরণ কমিয়ে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।
  • এছাড়াও যষ্টিমধু রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং বিভিন্ন ছত্রাক প্রতিরোধ করতে পারে। স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য দুধের সঙ্গে যষ্টিমধুর গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।

কালোজিরা

ভেষজ গুন সমৃদ্ধ উদ্ভিদ অন্যতম একটি উপাদান হলো কালোজিরা।প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরা নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতি গ্রাম কালোজিরায় যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা হলো- প্রোটিন, ভিটামিন-বি, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ফসফরাস, কপার, জিংক এবং ফোলাসিন। এছাড়া কালোজিরের মধ্যে রয়েছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন, লিনোলিক অ্যাসিড, ওলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম ,ফসফেট, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি ২, নায়াসিন, ভিটামিন-সি, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট। কালোজিরা-

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • বাতের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে
  • সর্দি-কাশিতে থেকে মুক্তি পেতে কালোজিরা ও মধু খাওয়ার বিকল্প নেই।
  • যারা উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন তাদের জন্য জন্য এটি খুবই উপকারী
  • রক্তসঞ্চালন বাড়ায় ও হৃদরোগের ঝুকি কমায়

তালমিছরি

ভেষজ গুন সমৃদ্ধ উদ্ভিদ অন্যতম একটি উপাদান হলো তালমিছরি। গুড় কিংবা চিনিতে কৃমির প্রকোপ বাড়ে। তাই তালমিছরিই ভরসা। বড় ছোট সবাই তালমিছরি নির্ভয়ে খেতে পারেন। তালমিছরিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকায় এটা আনিমিয়াতে ভীষণ ভাবে কাজে দেয়। বিশেষত মেয়েদের জন্য তালমিছরি খুব উপকারী। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

  • প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম আর পটাসিয়াম থাকার কারণে তালমিছরি হাড় ও দাঁত শক্ত করে। তাছাড়া হাড়ের সব সমস্যা দূর করে।
  • নারীদের মেনোপজের পরে হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে। আর হাড় ভাঙ্গার সমস্যা একটি দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই ক্ষয় রোধ করতে নিয়মিত তালমিছরি সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়। এই দুটি কারণের জন্য বাচ্চাদের জন্যও তালমিছরি খুব উপকারী।
  • তালমিছরির রস কাশি উপশম করতে সাহায্য করে এবং গলায় শ্লেষ্মা নরম করে দেয়, ফলে গলায় খুসখুসানি কমে যায়।এক টুকরো তালমিছরি মুখে নিয়ে চুষলে সর্দিতে এবং কাশিতে আরাম পাওয়া যায়।
  • কাশতে কাশতে গলায় ব্যথা হলে এক টুকরো তালমিছরি গোলমরিচ আর ঘি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে এক চামচ খেলে গলা ব্যাথায় উপকার মেলে। এক চামচ তালমিছরি, গোলমরিচ এবং আমন্ড-এর পেস্ট রোজ রাতে গরম দুধের সঙ্গে খেলে নাকের শ্লেষ্মা বের করে দেয় এবং ঠাণ্ডা লাগা প্রতিহত করে।
  • কিডনি স্টোন এর জন্য এটি বেশ উপকারী। পেঁয়াজের রসের সঙ্গে তালমিছরি মিশিয়ে খান। কিছুদিনের মধ্যেই প্রস্রাবের সঙ্গে কিডনি স্টোন বেরিয়ে আসবে। তাছাড়া তালমিছরি কিডনির জন্য উপকারী।

মধু

প্রথমেই যে কথাটি বলার তা হল মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। শরীরের ভেতরে বাইরে কোনো রকম ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান প্রতিরোধকারী শক্তি গড়ে তোলে, যে কোনো রকম সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।

  • নিয়মিত মধু খেলে পাকস্থলীতে বাড়তি গ্লুকোজ তৈরি হয়। এই গ্লুকোজ মস্তিষ্কের সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়। তার ফলে মেদ কমানোর হরমোন নিঃসরণের জন্য বেশি মাত্রায় চাপ সৃষ্টি করে। ফলে মেদ কমে যায়।
  • অনিদ্রার জন্য খুব ভালো ওষুধ হল মধু। রাতে নিয়ম করে মধু খেলে গভীর ঘুম হয়। মধু ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই যাঁদের আমাশা, ডায়রিয়া বা পেট খারাপের প্রবণতা আছে তাঁরা নিয়মিত মধু সেবন করতে পারেন।
  • খাঁটি মধু যদি ভোরবেলা খাওয়া যায় তা হলে অম্বলের সমস্যা, মুখে টক ভাব দূর করে। মধুর মধ্যে থাকা উপাদানগুলি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে খাবার খাওয়ার পর বদ হজম, গলা বুক জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা দূর হয়।
  • মধু খেলে পাকস্থলীর কাজ জোরালো হয়। কারণ এটি হজমে সাহায্য করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক অ্যসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। তার ফলে পাকস্থলীর কাজ ভালো হয়। এছাড়াও মধুর রয়েছে নানাবিধ গুন।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন উপরোল্লিখিত পণ্যগুলোর ঔষধি গুণ অগণিত। আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়া। আমাদের সুস্থতার জন্য উক্ত খাবারগুলো খুবই জরুরী। আরেকটি বিষয় আমাদের মাথায় রাখা জরুরী সেটি হলো বিখ্যাত দার্শনিক হিপোক্রিটাস বলেছেন “খাদ্যই আমাদের ঔষধ, ঔষধই আমাদের খাদ্য”। তাই আমাদের উচিত আমরা যা খাই সেটিকে ঔষধ হিসেবে গ্রহণ করা এবং সংশ্লেষিত বা কৃত্রিম ঔষধের ব্যবহার কমিয়ে নিয়ে আসা।  Alamin Organic Foods  প্রাকৃতিক ঔষধি গুণসম্পন্ন পণ্যই হোক আপনার সুস্থতার সঙ্গী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Home
Shop
Cart
Search